ভোটার বাড়ায় নির্ধারিত সময়ের পরও অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ; ফলের অপেক্ষায় রংপুরবাসী

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। তবে শেষ দিকে ভোটারদের ভিড় বাড়ায় ভোটগ্রহণের নির্ধারিত সময় সাড়ে চারটার পরও বেশ কিছু কেন্দ্রে নেয়া হয় ভোট। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল সাড়ে চারটার পরও যেসব কেন্দ্রের ভেতরে মানুষ থাকবে সেখানে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর ২২৯টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ঘন কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে থাকেন ভোটাররা। তবে ভোট গ্রহণের গতি ধীর ছিল বলে অভিযোগ ভোটারদের।

নির্বাচন বেশ উৎসবমুখর হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করেন তিনি।

সকাল ১০টার দিকে নগরীর লায়নস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, মানুষ আর ভুল করবেন না। তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। চমৎকার পরিবেশে সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। বিপুলভাবে সাড়া ও সমর্থন পেয়েছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি ৮টা ৫০ মিনিটে ভোট দেওয়ার জন্য কক্ষে ঢুকলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ত্রুটি দেখা দেয়। ভোট দিতে না পেরে ভোট কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোস্তফা। পরে অবশ্য তিনি ভোট দিতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি ইভিএম হ্যাং হয়েছে। এই যদি ইভিএমের অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ ভোট দেবে কীভাবে? আমরা প্রথম থেকে ইভিএম সচল রাখতে বলেছিলাম, কিন্তু রিটার্নিং অফিসার কথা শোনেননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। দু-একটি কেন্দ্রে ইভিএমে সমস্যা হলেও তাৎক্ষণিক সেটা ঠিক করা হয়েছে।০

ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে। নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট প্রার্থী ২৫১ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া ১১টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন– আওয়ামী লীগ মনোনীত হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির (জাপা) মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (বর্তমান মেয়র), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী লতিফুর রহমান মিলন (দল থেকে বহিষ্কৃত), ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, জাসদের শফিউর রহমান, জাকের পার্টির আশরাফুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২, বাকি দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৬৯ জন নারী। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৯টি। মোট ওয়ার্ড ৩৩টি।

রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ২০১২ সালে প্রথম নির্বাচন হয়। এই সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা দ্বিতীয় মেয়র নির্বাচিত হন।